Sunday 30 January 2022

জন্মদিনের উপহার

: দিদি, তোর অফিস থেকে ফিরতে কতক্ষন লাগবে? (ভাঙা পা নিয়ে খাটের উপর আধশোয়া অবস্থায় ফোন টিপতে টিপতে রিতুকে জিগ্যেস করলো রাতুল)
: বিকেল হবে। কেনো কিছু লাগবে তোর?
: এই নে পঞ্চাশ টাকা, আমার জন্য পাঁচটা গোল্ডলিফ সিগারেট আনিস।
: আমি মেয়ে মানুষ হয়ে তোর জন্য সিগারেট কিনবো ভাবলি কিভাবে?
: কেনো আমি ছেলে হয়ে তোর জন্য ন্যাপকিন কিনি না?
: সেটা তো আমার প্রয়োজন।
: হ্যাঁ, এটাও আমার তেমন প্রয়োজন। আনবি কিনা বল?
: না পারবো না।

মন খারাপ হয়ে গেলো রাতুলের, আজ যদি নিজে সুস্থ থাকতো তাহলে আর এতো সমস্যা হতো না। তার উপর বাসায় আম্মুকে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়াটাও একটা ঝামেলা। কিন্তু সিগারেট ছাড়াও চলবে না। কয়েকদিন আগে তার এক বন্ধু (শুভ) এক প্যাকেট এনে দিলো আর দুইটা আছে, কোনোরকম দিনটা কাটানো যাবে। রাতে কি হবে? শুভও চলে গেলো ট্যুরে। কিভাবে কি করবে মাথায় আসতেছেনা। এদিকে রিতু আর কিছুক্ষণের মধ্যে বের হয়ে যাবে।

আবার বললো রাতুল,
: দেখ, সবসময় তোকে আমি হেল্প করছি। আম্মুর বকা থেকে অনেকবার বাঁচিয়েছি, তুই যখন বলতি আমি দোকান থেকে এটা ওটা এনে দিতাম। এসবের বিনিময়ে কি তুই আমার জন্য এইটুকু করতে পারবি না।(ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে রাতুল)
: ছিঃ রাতুল তুই আমাকে খোঁটা দিচ্ছিস? পারবোনা বলছি, পারবোনা। 
এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসের দিকে ছুটলো রিতু। 

বারান্দায় এসে একটা সিগারেট ধরালো রাতুল। না এই ফ্যামিলিতে আর থাকা যাবেনা, সুস্থ হলেই কোথায়ও চলে যাবো। দরকার হলে কুলি-মজুরের কাজ করবে তবুও এই ফ্যামিলিতে আর না। সেখানে বিলাসিতা না থাকুক অন্তত তিনবেলা সিগারেট খেতে পারবে এটাই অনেক। এই মুহূর্তে রাতুলের মাথায় সিগারেট ছাড়া অন্য কোনো কিছু নেই।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, রিতু এখনো বাসায় ফিরেনি। রাতুলের টেনশন হচ্ছে। রাতুল আনাড়ি হয়েই নিজেকে বললো, যে মেয়ে আমার জন্য সিগারেট কিনতে পারবেনা সে আর যেই হোক আমার বোন হতে পারেনা। তবুও নিজেকে সামলাতে পারছে না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিতুর ফেরার পথে তাকিয়ে আছে। 

একটু পর রিতু এলো, রাতুল কোনো কথা বললো না। নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বসে রইলো। আজ থেকে এই বাড়িতে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলবেনা রাতুল। রাতে ভাত ও খায়নি। একটা সিগারেট তিনবারে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো রাতুল। 

সকালে ঘুম ভাঙলো, ওয়াশরুমে যেতে হবে। রুমের মধ্যে একটা ওয়াশরুম থাকলে অনশনে যাওয়া যেতো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখলো টেবিলে নাস্তা রাখা। রিতুই রেখে গিয়েছিলো অফিসে যাওয়ার আগে। রাগ ক্ষুধা একসাথে যোগ হলো। কিন্তু রাগকেই প্রাধান্য দিলো রাতুল। নাস্তার প্লেট সরাতে গিয়ে চোখে পড়লো একটা হলুদ রংয়ের চিরকুট। সেখানে লেখা আছে, 
"শুভ জন্মদিন একমাত্র আদরের রাগী ভাই আমার। তোর, জন্মদিনের উপহার টা ছাদের উত্তর পশ্চিম কোনায় রাখা আছে"

একটু উৎসাহী হয়ে রাতুল ছাদে গিয়ে দেখলো, একটা নতুন চকচকে গোল্ডলিফ সিগারেট এর প্যাকেট। সাথে সাথেই পুরো পরিবেশ বদলে গেলো। রাতুলের মনে হতে লাগলো এই বাড়ির সবকিছুই তার ভীষণ আপন, এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা। যে বাড়িতে জন্মদিনের উপহার হিসেবে এক প্যাকেট সিগারেট পাওয়া যায়, যতকিছুই হোক এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার মতো বাড়ি না। 

No comments:

Post a Comment

চারুর স্মৃতিপট এর কিছুকথা

- যেদিন আকাশে অনেক তারা ছিল সেদিন তুমি আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে মধ্যরাতে ছাদে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলে। তুমি গোধূলি ভালোবাসতে, কৃষি কলেজের ঘাঁষগ...